আল্লামা মুহাম্মদ ইকবালঃ এক অনন্য ব্যক্তিত্ব!!

Friday, March 05, 2010

আল্লামা মুহাম্মদ ইকবাল (জন্ম নভেম্বর ৯, ১৮৭৭; শিয়ালকোট, পাঞ্জাব - মৃত্যু: এপ্রিল ২১, ১৯৩৮) ছিলেন বিভাগপূর্ব ভারতবর্ষের মুসলিম কবি, দার্শনিক এবং রাজনীতিবিদ। তাঁর ফার্সী ও উর্দু কবিতা আধুনিক যুগের ফার্সী ও উর্দু সাহিত্যে অন্যতম শ্রেষ্ঠ হিসেবে বিবেচনা করা হয়। ইকবাল তাঁর ধর্মীয় ও ইসলামের রাজনৈতিক দর্শনের জন্যও বিশেষভাবে সমাদৃত ছিলেন। তাঁর একটি বিখ্যাত চিন্তা দর্শন হচ্ছে ভারতের মুসলমানদের জন্য স্বাধীন রাষ্ট্র গঠন। এই চিন্তাই বর্তমান পাকিস্তান রাষ্ট্রের সৃষ্টিতে ভূমিকা রেখেছে। তাঁর নাম মুহাম্মদ ইকবাল হলেও তিনি আল্লামা ইকবাল হিসেবেই অধিক পরিচিত। আল্লামা শব্দের অর্থ হচ্ছে শিক্ষাবিদ । তাঁর ফার্সী সৃজনশীলতার জন্য ইরানেও তিনি ছিলেন সমধিক প্রসিদ্ধ; তিনি ইরানে ইকবাল-ই-লাহোরী নামে পরিচিত।

পারিবারিক ইতিহাস: তাঁর পিতামহ শেখ রফিক কাশ্মির হতে শিয়ালকোটে গিয়ে বসবাস শুরু করেন। শেখ রফিক ছিলেন কাশ্মিরী শাল তৈরী এবং ব্যবসার সাথে জড়িত ছিলেন তিনি। তাঁর দু’টি পুত্র ছিলেন শেখ গোলাম কাদির এবং শেখ নুর মোহাম্মদ। শেখ নুর মোহাম্মদ ছিলেন ইকবালের পিতা। তিনি ছিলেন শিয়ালকোটের নামকরা দর্জি। শেখ নুর মোহাম্মদ কেবল পেশাগত দিক দিয়ে নয়, চিন্তাধারা এবং জীবন যাপনে ছিলেন ইসলামের প্রতি অত্যন্ত নিবেদিত প্রাণ। সুফি সঙ্গীদের কাছে তাঁর প্রচন্ড সম্মান ছিল। তাঁর স্ত্রী, মোহাম্মদ ইকবালের মা ইমাম বিবিও ছিলেন অত্যন্ত ধার্মিক মহিল। এই যুগল তাদের পাঁচ সন্তানের মধ্যে ইসলাম ধর্মের প্রতি গভীর অনুভুতির জন্ম দিয়েছিলেন।


শিক্ষা জীবন: পাঞ্জাবের বৃটিশ আর্মির কাছে শিখদের পরাজয়ের পর খ্রিষ্টান মিশনারীরা শিয়ালকোটে শিক্ষা প্রচারের উপর গুরুত্ব দিতে শুরু করেন। এই সময়েই শিয়ালকোটে স্কটিশ মিশন কলেজ স্থাপিত হয়। ১৮৮৯ সালে প্রতিষ্ঠিত এ কলেজ লিবারেল আর্টস্ এর কোর্সসমূহের অনেকগুলোতেই আরবি ও ফার্সী ভাষা মাধ্যমে শিক্ষাদান করা হতো। যদিও এই সময় বেশীর ভাগ স্কুলেই ফার্সী ভাষার পরিবর্তে ইংরেজি ভাষা শিক্ষার মাধ্যম হিসেবে ব্যবহার শুরু হয়। এই স্কটিশ মিশন কলেজেই ইকবাল সর্বপ্রথম আধুনিক শিক্ষা প্রাপ্ত হন।


ইকবাল তাঁর কাব্য প্রতিভার স্বীকৃতি পান তাঁর শিক্ষক সাইয়িদ মীর হাসানের কাছ থেকে। ১৮৯২ সালে ইকবাল স্কটিশ মিশন কলেজ হতে তাঁর পড়াশোন শেষ করেন। একই বৎসরে গুজরাটি চিকিৎসকের মেয়ে করিম বিবির সাথে তাঁর বিয়ে হয়। তাঁদের বিচ্ছেদ হয় ১৯১৬ সালে । এই বিয়েতে ইকবালের তিনটি সন্তান ছিল।


১৮৮৫ সালে স্কটিশ মিশন কলেজের পড়াশোনা শেষ করে ইকবাল লাহোরের সরকারী কলেজে ভর্তি হন। দর্শন, ইংরেজি ও আরবি সাহিত্য নিয়ে তিনি পড়াশোনা করেন এখান থেকে তিনি স্বর্ণ পদক নিয়ে স্নাতক ডিগ্রী লাভ করেন। ১৮৯৯ সালে যখন তিনি মাষ্টার্স ডিগ্রী লাভ করেন ততদিনে তিনি সাহিত্য অঙ্গনে পরিচিত ব্যক্তিত্ব।


মাষ্টার্স ডিগ্রীতে পড়বার সময় ইকবাল স্যার টমাস আর্নল্ড এর সংস্পর্শে আসেন। এই শিক্ষাবিদ ইসলাম ও আধুনিক দর্শনে বুৎপত্তি অর্জন করেছিলেন। ইকবালের কাছে তিনি প্রাচ্য ও পাশ্চাত্যের সেতুবন্ধ হিসেবে কাজ করেছিলেন। স্যার টমাস আর্নল্ডই ইকবালকে ইউরোপে উচ্চ শিক্ষায় অনুপ্রাণিত করেছিলেন।


ইউরোপে ইকবাল: ইকবাল ১৯০৫ সাল হতে লন্ডনে আইন বিষয়ে পড়াশোনা শুরু করেন । তিন বৎসরের আইনের ডিগ্রী লাভ করেন কেম্বব্রিজ বিশ্ববিদ্যালের লিঙ্কনস্ ইন হতে। আর ডক্টরেট ডিগ্রী লাভ করেন জার্মানীর মিউনিখ বিশ্ববিদ্যালয় হতে।


রাজনীতি: টেনে থাকতেই ইকবাল সর্বপ্রথম রাজনীতির সংস্পর্শে আসেন। ১৯০৬ সালে অল ইন্ডিয়া মুসলিম লীগ প্রতিষ্ঠিত হবার পরপরই তিনি তাতে যোগ দেন। দলের বৃটিশ চ্যাপ্টারের এক্সিকিউটিভ কমিটিতে নির্বাচিত হন ইকবাল। সৈয়দ হাসান বিলগামী এবং সৈয়দ আমীর আলীর সাথে তিনি সাব-কমিটির সদস্য হিসেবে মুসলিম লীগের খসড়া সংবিধান প্রস্তুত করেন। এর পর ১৯২৬ সালে তিনি লাহোরের মুসলিম লীগের পদে প্রতিদ্বন্দ্বিতা করে নির্বাচিত হন।


পেশাগত জীবন: ১৯০৮ সালে ইকবাল ইউরোপ হতে দেশে ফিরে আসেন এবং লাহোরের সরকারী কলেজে যোগদান করেন। এই সময় একই সাথে তিনি আইন ব্যবসা, শিক্ষাদান ও সাহিত্য চর্চা শুরু করেন। কিন্তু মূলত অর্থনৈতিক কারণেই তিনি ১৯০৯ সালে তিনি সার্বক্ষণিক আইন পেশায় নিয়োজিত হন। কিন্তু আয় রোজগারের ক্ষেত্রে এখানেও তিনি তেমন ভালো করতে পারেননি। এর কারণ তাঁর সাহিত্য প্রীতি এবং সেজন্যে সময় ব্যয় করা। তিনি তাঁর পিতাকে প্রতিজ্ঞা করেছিলেন যে কবিতার বিনিময়ে কোনো অর্থ তিনি গ্রহণ করবেন না। অর্থনৈতিক দুরবস্থার কারণে তিনি সে প্রতিজ্ঞা রাখতে পারেননি। ইতোমধ্যেই বিখ্যাত কবি ইকবালকে বৃটিশ সরকার তাঁকে “আসরার-ই-খোদায়ী” পুস্তকের জন্য নাইট উপাধিতে ভূষিত করেন।

You Might Also Like

0 comments

Popular Posts

Like us on Facebook

Flickr Images