***মানব জীবনে নিয়তের গুরুত্ব***
Tuesday, April 27, 2010
বিসমিল্লাহির রহমানির রাহিম
সকল প্রশংসা আল্লাহ তাআলার জন্যে। আমি সাক্ষ্য দিচ্ছি যে, আল্লাহ ছাড়া আর কেউই ইবাদত পাওয়ার যোগ্য নয় এবং আমি আরও সাক্ষ্য দিচ্ছি যে, মুহাম্মদ ﷺ আল্লাহর বান্দাহ ও রাসূল। উত্তম বাণী হচ্ছে আল্লাহর বাণী, উত্তম পথ হচ্ছে রাসূল ﷺ এর পথ এবং নিকৃষ্ট বিষয় হচ্ছে দ্বীন ইসলামের মধ্যে নতুন উদ্ভাবিত বিষয়(বিদআহ), নিশ্চয়ই প্রত্যেক বিদআহ’ই হচ্ছে পথভ্রষ্টতা আর পথভ্রষ্টতার গন্তব্যস্থল জাহান্নাম।
মানব জীবনে নিয়তের গুরুত্ব অনেক। রাসূল ﷺ বলেন,
প্রত্যেকটি আমল(কর্ম) নিয়তের উপর নির্ভরশীল বা সকল কাজের ফলাফল নিয়ত অনুযায়ী পাবে। (বুখারী ও মুসলিম)
আমাদের সমাজে অধিকাংশ মানুষ নিয়ত বলতে সাদা চোখে নামাজের পূর্বে নাওয়াতু আন... বা রোজার সময় নিয়তের কথা বুঝে থাকেন। অর্থাৎ নিয়ত বলতে অধিকাংশ মানুষ মোটামুটিভাবে এই দৃশ্য দুটি বুঝে থাকেন। যদিও এই দুটি নিয়মও সহীহ নিয়তের অন্তর্ভূক্ত না অর্থাৎ রাসূল ﷺ এভাবে মুখে উচ্চারণ করে নিয়তের শিক্ষা দেননি। নিয়তের বিষয়টিকে আমরা ভাগ করে ফেলেছি আর ভুল শিক্ষার মাধ্যমে শুধু দুইটি বিষয়ের উপর আবদ্ধ করে ফেলেছি আর জীবনের বাকী বিষয় সমূহকে নিয়তের বাইরে রেখে দিয়েছি। কিন্তু বাস্তবে মুসলামানদের প্রত্যেকটি কর্মের ফল হবে তার নিয়ত অনুযায়ী। অর্থাৎ যে ব্যক্তি যে নিয়ত অনুযায়ী যে কাজটি করবে সে ব্যক্তি সে অনুযায়ী ফলাফল পাবে। বিশুদ্ধ নিয়ত হতে হবে সকল কথা ও কাজের মধ্যে। তাহলেই সেটি ইবাদত হিসেবে গণ্য হবে আর সেই ইবাদত আল্লাহ তাআলাকে সন্তুষ্ট করবে।
উদাহরণ স্বরুপ: আমি এই লেখাটি লিখছি, এই লেখাটিরও একটি নিয়ত আছে, আর আমি সেই নিয়ত অনুযায়ী ফলাফল পাব। বিষয়টি আরেকটু খুলে বলি, আল্লাহ তাআলা বলেছেন সৎ কাজ করতে এবং সৎ কাজের আদেশ করতে, আমি লেখার শুরুতে এই নিয়তটি করে লেখাটি শুরু করেছি। যার ফলশ্রুতিতে আমার এই লেখাটাও একটি ইবাদত হিসেবে পরিগণিত হয়ে যাবে, ইনশাল্লাহ। আমি যে নিয়ত করেছি এর জন্যে কিন্তু আমাকে মুখে বলতে হয়নি, আমি মনে মনে অন্তর দিয়ে সংকল্প করেছি আর আল্লাহর নিকট সাহায্য চেয়েছি আমার নিয়ত যেন সহীহ হয়। এখন, লেখার শুরুতে যদি আমি এই নিয়তটি না করতাম অথবা অন্য একটি নিয়তে লিখতাম যেমন: লোকে আমাকে এই লেখা পড়ে বাহবা দিবে বা আমি মনে মনে মানুষের প্রশংসা পাওয়ার আশা করে লিখলাম তাহলে এই লেখাটি, এই লেখাটির পেছনে আমার সময় ব্যয় হবে তার সবই ব্যর্থ হয়ে যাবে। আমার এ লেখার বিনিময়ে আমি আল্লাহর নিকট থেকে কোন পুরস্কার পাব না।
এরপর আসি খাওয়ার ব্যাপারে! অনেকেই হয়তো বুঝতে পারছেন না, খাওয়ার আবার নিয়ত কি! বিষয়টি একটু খুলে বলি ইনশাল্লাহ বুঝতে সক্ষম হবেন। আপনি যখন খেতে যাবেন তখন আপনি খাবেন রাসূল ﷺ এর শেখানো নিয়মে। খাওয়ার শুরুতেই আপনি নিয়ত করবেন, আল্লাহ তাআলা আমাকে সৎ উপায়ে হালাল উপার্জনের মাধ্যমে এই খাবার খাওয়ার তৌফিক দিয়েছেন, আমি আল্লাহ তাআলার এই নিয়ামত খেয়ে শক্তি অর্জন করব আর এই শক্তি দিয়ে আরো বেশী বেশী করে আল্লাহ ও তাঁর রাসূলের আনুগত্য করব। এরপর বিসমিল্লাহ বলে খাওয়া শুরু করলেন, আপনার প্লেটের নিকটবর্তী স্থান থেকে খেলেন, খাবারের অপচয় করলেন না তাহলে আপনার এই খাওয়াটাও একটা ইবাদত হয়ে গেল।
এরপর ধরুন, এক গ্লাস পানি খাবেন। পানি খাওয়ার আগে নিয়ত করলেন, আমি মহান আল্লাহর এই নিয়ামত পান করে আল্লাহ তাআলার ইবাদত আরো বেশী বেশী করে করবো, আমি আরো বেশী বেশী আল্লাহ ও তাঁর রাসূলের আনুগত্য করবো। এটাও ইনশাল্লাহ ইবাদতে পরিণত হয়ে যাবে।
এরপর ধরুন, আপনি প্রাকৃতিক কাজ করতে টয়লেটে গেলেন, টয়লেটে যাওয়ার আগে বাম পা আগে দিলেন, মনে মনে বললেন, আল্লাহুম্মা ইন্নি আওযুবিকা মিনাল খুবছি ওয়াল খাবাইছ এরপর যখন বের হবেন তখন ডান পা আগে দিয়ে বের হয়ে বললেন, গুফরানাকা। এভাবে আপনার এই প্রাকৃতিক কাজটাও একটি ইবাদত হয়ে গেল!
আবার ধরুন, আপনি জানাজার নামাজ পড়তে যাবেন। এখান আপনার বন্ধু আপনাকে বললো, চল অমুক মারা গিয়েছে জানাজার নামাজটি পড়ে আসি। আপনি আপনার বন্ধুর কথামতো চলে গেলেন, কোন নিয়ত করলেন না, জানাজার নামাজ থেকে যে সওয়াবটুকু পাওয়ার কথা ছিল আপনি সেটা থেকে বঞ্চিত হলেন। কারণ, আপনি জানাজার নামাজ পড়তে গিয়েছেন আপনার বন্ধু বলেছিল বলে, আর এইটাই ছিল আপনার নিয়ত! কিন্তু আপনি যদি জানাজার নামাজে যাওয়া আগে এই নিয়ত করতেন যে, রাসূল ﷺ বলেছেন যে ব্যক্তি জানাজার নামাজ পড়ল সে এক কিরাত* পরিমাণ সওয়াব পাবে। আর যে ব্যক্তি কবর পর্যন্ত যাবে, মৃতকে কবর দেওয়ার পর তার আত্মীয়ের সাথে অবস্থান করবে সে আরো এক কিরাত পরিমাণ সওয়াব পাবে। তাহলে আপনি আপনার নিয়ত অনুযায়ী এই সওয়াবটুকু পেয়ে যাবেন ইনশাল্লাহ।
*কিরাত মানে একটি উহুদ পাহাড়ের সম পরিমাণ সওয়াব।
এরপর ধরুন, আপনি মসজিদে যেয়ে নামাজ পড়ছেন, কিন্তু আপনি আশা করছেন লোকে আপনাকে নামাজি বলুক, ভালো বলুক তাহলে আপনি যতই মুখে উচ্চারণ করে নাওয়াতু আন বলেন না কেন সেটা কোন নিয়তই হবে না। কিন্তু আপনি যদি এভাবে নিয়ত করতেন যে, আমি আল্লাহর আদেশ অনুযায়ী, রাসূল ﷺ এর সুন্নাহ অনুযায়ী এখান অমুক ওয়াক্তের নামাজ পড়তে মসজিদে যাচ্ছি এরপর মসজিদে যেয়ে আল্লাহু আকবর বলে নামাজে দাড়িয়ে গেলেন, আর এভাবে আপনার নামাজটি ফলপ্রসু হয়ে যাবে ইনশাল্লাহ।
রমাদান মাসে রোজার সময়ও বিষয়টি এমন। আপনি রোজা রাখেন কেননা আপনার পরিবারের আর সবাই রাখে তাই, আপনার বন্ধুরা রাখে তাই, আর এটাই আপনার নিয়ত যদিও মুখে হাজারবার নাওয়াতু আন বলেন না কেন। কিন্তু আপনি যদি এভাবে নিয়ত করেন, যেমন, রোজা একটি ফরজ ইবাদত, আল্লাহর তাআলা এই রোজা আমাদের জন্যে ফরজ করেছেন যাতে করে আমরা আরো বেশী তাকওয়া সম্পন্ন হতে পারি, এরপর আপনি রোজা রাখবেন রাসূল ﷺ এর সুন্নাহ অনুযায়ী, এই নিয়ত নিয়ে যখন আপনি প্রতিদিন সাহরী খেতে উঠবেন তখনি আপানর রোজার নিয়ত হয়ে যাবে, মুখে উচ্চারণ করে নিয়ত বলার প্রয়োজন হবে না। আর এভাবেই আপনার রোজাটি ফলপ্রসু হবে ইনশাল্লাহ।
আপনি ইলম অর্জন করছেন শুধু জানার স্বার্থে অর্থাৎ জানার জন্যে জানা, অন্যদের সাথে তর্ক করার স্বার্থে, আপনি জানেন অন্যেরা জানেনা তাদের হেয় করবেন এই স্বার্থে তাহলে এই ইলম আপনার বিন্দুমাত্র উপকার করবে না। কিন্তু আপনি যদি ইলম অর্জন করেন আল্লাহকে সন্তুষ্ট করার নিয়তে, আরো বেশী আল্লাহ ও তাঁর রাসূলে আনুগত্য করার স্বার্থে, ইলম অনুযায়ী আমল করবেন এই স্বার্থে, মানুষকে হক কথার আদেশ দিবেন এই স্বার্থে তাহলে আপনার ইলম অর্জন একটি ইবাদত হবে, ইনশাল্লাহ।
এভাবে আপনার জীবনের প্রত্যেকটি কথা, কাজ ও চিন্তাকে নিয়ত করে সম্পাদন করুন। নীচের বিষয়গুলোকে মনে রাখুনঃ
১. আপনি যে অর্থ উপার্জন করছেন সেটি কি হালাল? সে অর্থ উপার্জন কি আল্লাহর সন্তুষ্টি অর্জনের জন্যে করছেন?
২. আপনি যেভাবে পড়ালেখা করেছেন সেটাকি ঠিক ছিল, পড়ালেখা করার নিয়ত কি ছিল? আপনি যে আপনার ছেলেমেয়েদের পড়ালেখা করাচ্ছেন, তার পিছনে কি নিয়ত কাজ করছে? শুধু কি দুনিয়ার মোহ কাজ করছে?
৩. আপনি একটি কাজকে ইবাদত বলে জানেন, আপনি কি জেনে নিয়েছেন কাজটি করতে আল্লাহ তাআলা আদেশ করেছেন কিনা? আপনি কি জেনে নিয়েছেন রাসূল ﷺ কাজটি কিভাবে সম্পাদন করতেন? আপনি কি জেনে নিয়েছেন সাহাবীরা কিভাবে ইসলামকে বুঝতেন?
৪. আপনার শ্রম, সময়, অর্থ কি নিয়তে খরচ করছেন? এতে কি আল্লাহর সন্তুষ্টি আছে? রাসূল ﷺ কি কাজটি এভাবে করে দেখিয়েছেন?
আমরা দু’একটি কাজ বাদে প্রত্যেকটি কাজ থেকে নিয়তকে বিদায় করে দিয়েছি আর যার কারণে রাসূল ﷺ এর সুন্নাহও আমাদের নিকট থেকে দূরে সরে যাচ্ছে, বিদআহ আমাদের ঘিরে ধরেছে। দেখা যায়, অনেক পরিবারের সদস্য মসজিদে যেয়ে নামাজ পড়ছে, মহিলা সদস্যরা পর্দা করছেন কিন্তু জীবনের অন্যান্য কাজ সম্পাদন করতে যেয়ে তারা কোন নিয়তই করছেন না। কারণ, নিয়ত করলেই মনে রাখতে হবে আল্লাহর আদেশের কথা, আল্লাহর কথার আনুগত্যের কথা, রাসূল ﷺ এর সুন্নাহ মোতাবেক কাজ করার কথা।
দৈহিক, মানসিক, শারীরীক সকল ইবাদত একমাত্র আল্লাহ তাআলার জন্যে। আল্লাহর তাআলার শান্তি, রহমত ও বরকত রাসূল ﷺ এবং তারা পরিবারের উপর, তার সাহাবাদের উপর এবং কিয়ামত পর্যন্ত তাদেরকে যারা অনুসরণ করবে তাদের অর্পিত হোক আমীন। إﻧﻤﺎ اﻷﻋﻤﺎل ﺑﺎﻟﻨﻴﺎ ت
সকল প্রশংসা আল্লাহ তাআলার জন্যে। আমি সাক্ষ্য দিচ্ছি যে, আল্লাহ ছাড়া আর কেউই ইবাদত পাওয়ার যোগ্য নয় এবং আমি আরও সাক্ষ্য দিচ্ছি যে, মুহাম্মদ ﷺ আল্লাহর বান্দাহ ও রাসূল। উত্তম বাণী হচ্ছে আল্লাহর বাণী, উত্তম পথ হচ্ছে রাসূল ﷺ এর পথ এবং নিকৃষ্ট বিষয় হচ্ছে দ্বীন ইসলামের মধ্যে নতুন উদ্ভাবিত বিষয়(বিদআহ), নিশ্চয়ই প্রত্যেক বিদআহ’ই হচ্ছে পথভ্রষ্টতা আর পথভ্রষ্টতার গন্তব্যস্থল জাহান্নাম।
মানব জীবনে নিয়তের গুরুত্ব অনেক। রাসূল ﷺ বলেন,
প্রত্যেকটি আমল(কর্ম) নিয়তের উপর নির্ভরশীল বা সকল কাজের ফলাফল নিয়ত অনুযায়ী পাবে। (বুখারী ও মুসলিম)
আমাদের সমাজে অধিকাংশ মানুষ নিয়ত বলতে সাদা চোখে নামাজের পূর্বে নাওয়াতু আন... বা রোজার সময় নিয়তের কথা বুঝে থাকেন। অর্থাৎ নিয়ত বলতে অধিকাংশ মানুষ মোটামুটিভাবে এই দৃশ্য দুটি বুঝে থাকেন। যদিও এই দুটি নিয়মও সহীহ নিয়তের অন্তর্ভূক্ত না অর্থাৎ রাসূল ﷺ এভাবে মুখে উচ্চারণ করে নিয়তের শিক্ষা দেননি। নিয়তের বিষয়টিকে আমরা ভাগ করে ফেলেছি আর ভুল শিক্ষার মাধ্যমে শুধু দুইটি বিষয়ের উপর আবদ্ধ করে ফেলেছি আর জীবনের বাকী বিষয় সমূহকে নিয়তের বাইরে রেখে দিয়েছি। কিন্তু বাস্তবে মুসলামানদের প্রত্যেকটি কর্মের ফল হবে তার নিয়ত অনুযায়ী। অর্থাৎ যে ব্যক্তি যে নিয়ত অনুযায়ী যে কাজটি করবে সে ব্যক্তি সে অনুযায়ী ফলাফল পাবে। বিশুদ্ধ নিয়ত হতে হবে সকল কথা ও কাজের মধ্যে। তাহলেই সেটি ইবাদত হিসেবে গণ্য হবে আর সেই ইবাদত আল্লাহ তাআলাকে সন্তুষ্ট করবে।
উদাহরণ স্বরুপ: আমি এই লেখাটি লিখছি, এই লেখাটিরও একটি নিয়ত আছে, আর আমি সেই নিয়ত অনুযায়ী ফলাফল পাব। বিষয়টি আরেকটু খুলে বলি, আল্লাহ তাআলা বলেছেন সৎ কাজ করতে এবং সৎ কাজের আদেশ করতে, আমি লেখার শুরুতে এই নিয়তটি করে লেখাটি শুরু করেছি। যার ফলশ্রুতিতে আমার এই লেখাটাও একটি ইবাদত হিসেবে পরিগণিত হয়ে যাবে, ইনশাল্লাহ। আমি যে নিয়ত করেছি এর জন্যে কিন্তু আমাকে মুখে বলতে হয়নি, আমি মনে মনে অন্তর দিয়ে সংকল্প করেছি আর আল্লাহর নিকট সাহায্য চেয়েছি আমার নিয়ত যেন সহীহ হয়। এখন, লেখার শুরুতে যদি আমি এই নিয়তটি না করতাম অথবা অন্য একটি নিয়তে লিখতাম যেমন: লোকে আমাকে এই লেখা পড়ে বাহবা দিবে বা আমি মনে মনে মানুষের প্রশংসা পাওয়ার আশা করে লিখলাম তাহলে এই লেখাটি, এই লেখাটির পেছনে আমার সময় ব্যয় হবে তার সবই ব্যর্থ হয়ে যাবে। আমার এ লেখার বিনিময়ে আমি আল্লাহর নিকট থেকে কোন পুরস্কার পাব না।
এরপর আসি খাওয়ার ব্যাপারে! অনেকেই হয়তো বুঝতে পারছেন না, খাওয়ার আবার নিয়ত কি! বিষয়টি একটু খুলে বলি ইনশাল্লাহ বুঝতে সক্ষম হবেন। আপনি যখন খেতে যাবেন তখন আপনি খাবেন রাসূল ﷺ এর শেখানো নিয়মে। খাওয়ার শুরুতেই আপনি নিয়ত করবেন, আল্লাহ তাআলা আমাকে সৎ উপায়ে হালাল উপার্জনের মাধ্যমে এই খাবার খাওয়ার তৌফিক দিয়েছেন, আমি আল্লাহ তাআলার এই নিয়ামত খেয়ে শক্তি অর্জন করব আর এই শক্তি দিয়ে আরো বেশী বেশী করে আল্লাহ ও তাঁর রাসূলের আনুগত্য করব। এরপর বিসমিল্লাহ বলে খাওয়া শুরু করলেন, আপনার প্লেটের নিকটবর্তী স্থান থেকে খেলেন, খাবারের অপচয় করলেন না তাহলে আপনার এই খাওয়াটাও একটা ইবাদত হয়ে গেল।
এরপর ধরুন, এক গ্লাস পানি খাবেন। পানি খাওয়ার আগে নিয়ত করলেন, আমি মহান আল্লাহর এই নিয়ামত পান করে আল্লাহ তাআলার ইবাদত আরো বেশী বেশী করে করবো, আমি আরো বেশী বেশী আল্লাহ ও তাঁর রাসূলের আনুগত্য করবো। এটাও ইনশাল্লাহ ইবাদতে পরিণত হয়ে যাবে।
এরপর ধরুন, আপনি প্রাকৃতিক কাজ করতে টয়লেটে গেলেন, টয়লেটে যাওয়ার আগে বাম পা আগে দিলেন, মনে মনে বললেন, আল্লাহুম্মা ইন্নি আওযুবিকা মিনাল খুবছি ওয়াল খাবাইছ এরপর যখন বের হবেন তখন ডান পা আগে দিয়ে বের হয়ে বললেন, গুফরানাকা। এভাবে আপনার এই প্রাকৃতিক কাজটাও একটি ইবাদত হয়ে গেল!
আবার ধরুন, আপনি জানাজার নামাজ পড়তে যাবেন। এখান আপনার বন্ধু আপনাকে বললো, চল অমুক মারা গিয়েছে জানাজার নামাজটি পড়ে আসি। আপনি আপনার বন্ধুর কথামতো চলে গেলেন, কোন নিয়ত করলেন না, জানাজার নামাজ থেকে যে সওয়াবটুকু পাওয়ার কথা ছিল আপনি সেটা থেকে বঞ্চিত হলেন। কারণ, আপনি জানাজার নামাজ পড়তে গিয়েছেন আপনার বন্ধু বলেছিল বলে, আর এইটাই ছিল আপনার নিয়ত! কিন্তু আপনি যদি জানাজার নামাজে যাওয়া আগে এই নিয়ত করতেন যে, রাসূল ﷺ বলেছেন যে ব্যক্তি জানাজার নামাজ পড়ল সে এক কিরাত* পরিমাণ সওয়াব পাবে। আর যে ব্যক্তি কবর পর্যন্ত যাবে, মৃতকে কবর দেওয়ার পর তার আত্মীয়ের সাথে অবস্থান করবে সে আরো এক কিরাত পরিমাণ সওয়াব পাবে। তাহলে আপনি আপনার নিয়ত অনুযায়ী এই সওয়াবটুকু পেয়ে যাবেন ইনশাল্লাহ।
*কিরাত মানে একটি উহুদ পাহাড়ের সম পরিমাণ সওয়াব।
এরপর ধরুন, আপনি মসজিদে যেয়ে নামাজ পড়ছেন, কিন্তু আপনি আশা করছেন লোকে আপনাকে নামাজি বলুক, ভালো বলুক তাহলে আপনি যতই মুখে উচ্চারণ করে নাওয়াতু আন বলেন না কেন সেটা কোন নিয়তই হবে না। কিন্তু আপনি যদি এভাবে নিয়ত করতেন যে, আমি আল্লাহর আদেশ অনুযায়ী, রাসূল ﷺ এর সুন্নাহ অনুযায়ী এখান অমুক ওয়াক্তের নামাজ পড়তে মসজিদে যাচ্ছি এরপর মসজিদে যেয়ে আল্লাহু আকবর বলে নামাজে দাড়িয়ে গেলেন, আর এভাবে আপনার নামাজটি ফলপ্রসু হয়ে যাবে ইনশাল্লাহ।
রমাদান মাসে রোজার সময়ও বিষয়টি এমন। আপনি রোজা রাখেন কেননা আপনার পরিবারের আর সবাই রাখে তাই, আপনার বন্ধুরা রাখে তাই, আর এটাই আপনার নিয়ত যদিও মুখে হাজারবার নাওয়াতু আন বলেন না কেন। কিন্তু আপনি যদি এভাবে নিয়ত করেন, যেমন, রোজা একটি ফরজ ইবাদত, আল্লাহর তাআলা এই রোজা আমাদের জন্যে ফরজ করেছেন যাতে করে আমরা আরো বেশী তাকওয়া সম্পন্ন হতে পারি, এরপর আপনি রোজা রাখবেন রাসূল ﷺ এর সুন্নাহ অনুযায়ী, এই নিয়ত নিয়ে যখন আপনি প্রতিদিন সাহরী খেতে উঠবেন তখনি আপানর রোজার নিয়ত হয়ে যাবে, মুখে উচ্চারণ করে নিয়ত বলার প্রয়োজন হবে না। আর এভাবেই আপনার রোজাটি ফলপ্রসু হবে ইনশাল্লাহ।
আপনি ইলম অর্জন করছেন শুধু জানার স্বার্থে অর্থাৎ জানার জন্যে জানা, অন্যদের সাথে তর্ক করার স্বার্থে, আপনি জানেন অন্যেরা জানেনা তাদের হেয় করবেন এই স্বার্থে তাহলে এই ইলম আপনার বিন্দুমাত্র উপকার করবে না। কিন্তু আপনি যদি ইলম অর্জন করেন আল্লাহকে সন্তুষ্ট করার নিয়তে, আরো বেশী আল্লাহ ও তাঁর রাসূলে আনুগত্য করার স্বার্থে, ইলম অনুযায়ী আমল করবেন এই স্বার্থে, মানুষকে হক কথার আদেশ দিবেন এই স্বার্থে তাহলে আপনার ইলম অর্জন একটি ইবাদত হবে, ইনশাল্লাহ।
এভাবে আপনার জীবনের প্রত্যেকটি কথা, কাজ ও চিন্তাকে নিয়ত করে সম্পাদন করুন। নীচের বিষয়গুলোকে মনে রাখুনঃ
১. আপনি যে অর্থ উপার্জন করছেন সেটি কি হালাল? সে অর্থ উপার্জন কি আল্লাহর সন্তুষ্টি অর্জনের জন্যে করছেন?
২. আপনি যেভাবে পড়ালেখা করেছেন সেটাকি ঠিক ছিল, পড়ালেখা করার নিয়ত কি ছিল? আপনি যে আপনার ছেলেমেয়েদের পড়ালেখা করাচ্ছেন, তার পিছনে কি নিয়ত কাজ করছে? শুধু কি দুনিয়ার মোহ কাজ করছে?
৩. আপনি একটি কাজকে ইবাদত বলে জানেন, আপনি কি জেনে নিয়েছেন কাজটি করতে আল্লাহ তাআলা আদেশ করেছেন কিনা? আপনি কি জেনে নিয়েছেন রাসূল ﷺ কাজটি কিভাবে সম্পাদন করতেন? আপনি কি জেনে নিয়েছেন সাহাবীরা কিভাবে ইসলামকে বুঝতেন?
৪. আপনার শ্রম, সময়, অর্থ কি নিয়তে খরচ করছেন? এতে কি আল্লাহর সন্তুষ্টি আছে? রাসূল ﷺ কি কাজটি এভাবে করে দেখিয়েছেন?
আমরা দু’একটি কাজ বাদে প্রত্যেকটি কাজ থেকে নিয়তকে বিদায় করে দিয়েছি আর যার কারণে রাসূল ﷺ এর সুন্নাহও আমাদের নিকট থেকে দূরে সরে যাচ্ছে, বিদআহ আমাদের ঘিরে ধরেছে। দেখা যায়, অনেক পরিবারের সদস্য মসজিদে যেয়ে নামাজ পড়ছে, মহিলা সদস্যরা পর্দা করছেন কিন্তু জীবনের অন্যান্য কাজ সম্পাদন করতে যেয়ে তারা কোন নিয়তই করছেন না। কারণ, নিয়ত করলেই মনে রাখতে হবে আল্লাহর আদেশের কথা, আল্লাহর কথার আনুগত্যের কথা, রাসূল ﷺ এর সুন্নাহ মোতাবেক কাজ করার কথা।
দৈহিক, মানসিক, শারীরীক সকল ইবাদত একমাত্র আল্লাহ তাআলার জন্যে। আল্লাহর তাআলার শান্তি, রহমত ও বরকত রাসূল ﷺ এবং তারা পরিবারের উপর, তার সাহাবাদের উপর এবং কিয়ামত পর্যন্ত তাদেরকে যারা অনুসরণ করবে তাদের অর্পিত হোক আমীন। إﻧﻤﺎ اﻷﻋﻤﺎل ﺑﺎﻟﻨﻴﺎ ت
0 comments